ওয়াকফ সংশোধন আইন ২০২৫

men-saffron-flags-prayagraj

ওয়াকফ সংশোধন আইন ২০২৫, যার পোসাকি নাম – Unified Waqf Management, Empowerment, Efficiency, and Development Act—সংক্ষেপে UMEED কিছুদিন আগেই ভারতে বলবৎ হয়েছে। 

বিজেপি সরকার এই আইনকে স্বচ্ছতা ও সংস্কারের পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরছে। আমাদের বলা হচ্ছে যে, এই আইন ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করতে আনা হয়েছে।

New Waqf Act protest rally in Kolkata
(Photo by Rupak De Chowdhuri/NurPhoto via Getty Images)

কিন্তু এই আইন দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই আইন বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে বিরোধী নেতৃবৃন্দ, নাগরিক অধিকার সংগঠন এবং ধর্মীয় সংস্থার পক্ষ থেকে, যারা একে সংবিধানবিরোধী, বৈষম্যমূলক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর আঘাত বলে মনে করছেন।

ওয়াকফ বিল সমর্থন করে বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা সংসদে যেভাবে অসত্য ভাষন দিয়েছেন, যেসব উসকানি মূলক কথাবার্তা বলেছেন তাতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। 

প্রথমেই বলে রাখি ওয়াকফ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হল দান বা উৎসর্গ। হিন্দুরা যেমন তাদের দেবতার জন্য বা মন্দিরের জন্য জমি জায়গা দান করে থাকেন, মুসলনামরাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন ধর্মিয় ও জনসেবামূলক কাজে জমি জায়গা, ঘর বাড়ি দান করে থাকেন, একেই ওয়াকফ বলে। কোন সম্পদ একবার ওয়াকফ করা হয়ে গেলে সেটা আর ফেরত নেওয়া যায় না, বিক্রি করা যায় না, কাউকে পুনরায় দান বা উপহার দেওয়া যায় না, যে উদ্দেশ্যে উয়াকফ করা হয়েছে শুধুমাত্র সেই উদ্দেশ্যেই সেটা ব্যবহার করতে হয়।

সারা ভারতে এরকম হাজার হাজার ওয়াকফ সম্পত্তি দেখা শুনে করে যে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা সেটাকেই ওয়াকফ বোর্ড বলে।


ভারতে মুসলমান সুলতানদের শাষনামলে এই ওয়াকফের ঐতিহ্য শুরু হলেও মুসলমান শাসকরা ওয়াকফ পরিচালনা করার জন্য আলাদা কোন সংস্থা বা বিভাগ তৈরি করেননি। গ্রামের কাজি সাধারনত এক দায়িত্ব পালন করতেন। 

ব্রিটিশ সরকার জনসেবামূলক কাজের জন্য উৎসর্গ করা এই বিপুল সম্পত্তি সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করার জন্য সর্বপ্রথম ১৮১০ সালে একটি রেজুলেসন পাশ করেন Regulation XIX of 1810 of Bengal Code.

তারপর একাধিক রেজুলেসন এবং আইন পাশ করে ওয়াকফ পরিচালাকে আরো সুষ্ঠ ও কার্যকরি করে তুলার চেষ্টা করা হয়। যেমন 

  • Regulation Endowment Act 1863
  • The Kazi Act 1864
  • Charitable Endowment Act 1890
  • Section 92 and 93 of the CPC 1908
  • Mussalman Waqf Validating Act 1913, 
  • Mussalman Waqf Act 1923
  • Bihar and Orissa Mussalman Waqf Act 1926
  • Bengal Waqf Act 1934 etc.

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত সরকার পাশ করে Central Waqf Act 1954. তারপর একধিক বার এই আইন সংসোধন, পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন –

  • The public Waqf (Extension) of Limitation Act 1959
  • Bengal Waqf (Amendment) Act 1973
  • The Waqf (Amendment) Act 1984
  • And The Waqf Act 1995

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত সরকার ব্রিটিশ আমলের ওয়াকফের পুরানো সব আইনকে একত্রিত করে, সংশোধন ও পরিবর্তন করে নতুন ওয়াকফ আইন তৈরি করে – Central Waqf Act 1954. তারপরও অনেক বার ওয়াকফ আইন পরির্তন করা হয়েছে, সব শেষে ছিল The Waqf Act 1995

 এই ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের আওতায় প্রতিটি রাজ্যে একটি করে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড আছে, এবং একটি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল রয়েছে যেটা রাজ্যগুলিকে গাইডলাইন দিয়ে থাকে। এই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডের কাজ হচ্ছে, এই ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোর যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেওয়া—উপাসনা, শিক্ষা বা জনসেবামূলক কাজের উদ্দেশ্যে এগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা । এসব সম্পত্তি রেজিস্টার করা, বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং অন্যের দখল থেকে রক্ষা করা। 

ওয়াকফ বোর্ড একটি প্রশাসনিক আইনগত সংস্থা। যেটা পুরোপুরি সরকার দ্বার নিয়ন্ত্রিত হয়। ওয়াকফ বোর্ডের কর্মি, অফিসার, চেয়ারমেন সবাইকে সরকার থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বর্তমানে বিজেপি সরকার যে নতুন ওয়াকফ সংশোধন আইন ২০২৫ তৈরি করেছে এবং সেটা নিয়ে সারা দেশ জুড়ে যে অসোন্তোষ আন্দোলন বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে সেটা আগে কখনও দেখা যায় নি।

বিজেপি নুতন ওয়াকফ আইন তৈরি করতে গিয়ে সংসদে যে সব অসত্য় কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, উসকানি মুলক কথা বলেছে, তাতে তাদের আসল উদ্দ্যশ্য নিয়ে মুসলমান দের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।


কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লোকহীত প্রবন্ধে বলেছিলেন – “ভাল করিব বলিলেই হয় না, ভাল করিবার অধিকরা থাকা চাই।”

যে বিজেপির ভারতের লোক সভায়, রাজ্য সভায় এমন কি কোন রাজ্যের কোন বিধান সভায় একজনও মুসলমান সাংসদ – বিধায়ক নেই সেই বিজেপি মুসলমানদের ভাল করতে চাইছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে যখন মুসলমানদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে মুসলমানদেরকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিনত করা হচ্ছে,

Reject new waqf act 2025 - image -1

Reject new waqf act 2025 - image -2

Reject new waqf act 2025 - image -3

Reject new waqf act 2025 - image -4
প্রয়াগরাজে মসজিদের মাথায় গেরুয়া পতাকা – ছবিঃ গুগুলস থেকে সংগ্রহিত।

Reject new waqf act 2025 - image -5
মসজিদের মাথায় গেরুয়া পতাকা – ছবিঃ গুগুলস থেকে সংগ্রহিত।

সামান্য অজুহাতে মুসলমানদের ঘর বাড়ী দোকান পাঠ বুলডোজার চালিয়ে মাটিতে মিসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, গোমাংস খাওয়ার মিথ্যা অজুহাতে মুসলমানদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে, অপরাধিকে ফুলের মালা পরিয়ে মিছিল করে সম্বর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। দাঁড়ি টুপি পরা মুসলমান দেখলেই জোর করে জয় শ্রী রাম বলিয়ে অপমান করা হচ্ছে, শত শত বছরের পুরানো মসজিদের নিচে মন্দির আছে কি না খুঁজে দেখার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, হিন্দুদের ধর্মিয় উৎসবের সময় গরীব মুসলমানদের দোকান বসাতে আপত্তি করা হচ্ছে। 

জুম্মার দিন – ঈদের দিন ১৫ – ২০ মিনিটের জন্য রাস্তায় নামাজ পড়তে নিষেধাজ্ঞা যারি করেছে, অথচ গনেশ পুজার নামে সপ্তাহভর রাস্তা আটকে রাখলে যাদের কোন আপত্তি নেই, এমনকি মুসলমানদের নিজের বাড়ির ছাদে নামাজ পড়ার উপরও নিসেধাজ্ঞা জারি করেছে, হোলির সময় মুসলমানদের মসজিদ গুলোকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে, রাম নবমি – হনুমান জয়ন্তিতে মুসলমানদের মসজিদের সামনে এমনকি মসজিদের উপর উঠে অস্ত্রহাতে গেরুয়া নৃত্য করে মুসলমানদের সন্ত্রস্ত করা হচ্ছে, সেই বিজেপি মুসলমানদের ভালর জন্য আইন তৈরি করছে?


বিজেপির ভাষ্য অনুযায়ী নতুন ওয়াকফ আইন গরীব মুসলমানদের আর্থিক উন্নতিতে সহায়তা করবে।

প্রশ্ন হচ্ছে হিন্দু দের মধ্যে কি গরিবী নেই, হিন্দু দের মধ্যে কি পিছিয়ে থাকা মানুষজন নেই? তাহলে হিন্দুদের যে হাজার হাজার একর দেবত্বর সম্পত্তি রয়েছে সেগুলোকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না

সারা ভারতে মোট ওয়াকফ জমির পরিমান যদি ৮,০০,০০০ একর হয়., তবে দক্ষিন ভারতের শুধু চারটি রাজ্যে মোট হিন্দু দেবত্বর সম্পত্তির পরিমান ১০,০০০০০০ একরের বেশি, ( তামিল নাড়ুতে ৪,৪৭০০০ একর, অন্ধ্র প্রদেশ ৪,৬৫০০০ একর, তেলেঙ্গানা ৮৭০০০ একর, তিরুপতি ৭২৩ একর – মোট ১০,০০০,০০ একরের বেশি – হিন্দু দেবত্তর সম্পত্তি রয়েছে শুধু চার টি রাজ্যে) তাহলে সারা ভারতে দেবত্বর সম্পত্তির পরিমান মুসলমানদের ওয়াকফ সস্পিত্তির থেকে অনেক অনেক বেশি। 

তাহলে বিজেপি সরকার আইন করে এই সম্পত্তি গরিব পিছিয়ে থাকা হিন্দুদের জন্য, হিন্দু গরীব বিধবা এবং শিশুদের জন্য কেন কাজে লাগাচ্ছে না। ভারতের মন্দির গুলোতে যে টন টন সোনা জমা হয়ে আছে, সেগুলো কাজে লাগালে ভারত সরকারের সমস্ত দেশি বিদেশ ঋণ শোধ হয়ে যাবে, ভারতের টাকার দাম ব্রিটিশ পাউন্ডের থেকে বেশি হবে, ভারতে একজন হিন্দুও গরিব থাকবে না, বিজেপি আইন করে এই কাজ টা কেন করছে না। বিজেপির যত চিন্তা শুধু মুসলমান দের জন্য, গরিব হিন্দুদের জন্য কোন চিন্তা নেই।


নতুন আইনে ওয়াকফ বাই ইউজার বাতিল করা হয়েছে।

শত শত বছর আগে মুসলমান শাসক রা এমন কি অনেক হিন্দু রাজারা মহারাজারাও তাদের মুসলমান প্রজাদের মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানের জন্য অনেক জমি দান করে গেছেন, যেগুলোর বর্তমানে কোন লিখিত কাগজ বা কোন ডকুমেন্ট নেই। কিন্ত হাজার বছর ধরে সেখানে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া হচ্ছে, কবরস্থানে কবর দেওয়া হচ্ছে, একেই ওয়াকফ বাই ইউজার বলে, 

ভারতে এটা সিকৃত প্রথা, হাই কোর্ট – সুপ্রিম কোর্ট  এই প্রথাকে মান্যতা দিয়েছে। নুতন আইনে ওয়াকফ বাই ইউজার বাতিল করে এই সব হাজার বছরের পুরানো ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো কৌশলে দখল করে নেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে।


নুতন ওয়াকফ আইনে ল অফ লিমিটেশন লাগু করা হয়েছে, যেটা আগে ছিল না।

কোন সম্পত্তি সংস্রান্ত মামলা ১২-১৩ বছর ধরে ফেলে রাখা যাবে না, তার মধ্যেই মামলার নিস্পত্তি করতে হবে। একেই ল অফ লিমিটেশন বলে। ১৯৯৫ সালের অওয়াকফ আইনকে ল অফ লিমিটেশনের বাইরে রাখা হয়েছিল। বিজেপির বক্তব্য এই ল অফ লিমিটেসন না থাকার জন্যই ওয়াকফ সংস্ক্রান্ত কয়েক হাজার মামলা আদলতে ঝুলে রয়েছে, এখন এই সব মামলার দ্রুত মিমাংসা করা হবে। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি ভারতের বিভিন্ন রাজের আদালতে ৬৪৬৮৭টা সিভিল কেস, ১৮২৩৫ টা ক্রিমিনাল কেস ঝুলে রয়েছে, হাজার হাজার ব্যক্তি বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে বন্দি রয়েছে।

সেখানে ওয়াকফের মামলা রয়েছে মাত্র 14 – 15000, এর বেশির ভাগই সরকার এবং ক্ষমতাশালি লোকদের বিরুদ্ধে। সরকার এবং ক্ষমতাশালি লোকেরা হাজার হাজার একর ওয়াকফের জমি দখল করে রেখেছে, গরীব মুসলমানের পয়সা নেই সরকার বা ক্ষমতাশালি লোকদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার, তাই এই কেসগুলো বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে। ল অফ  লিমিটেসন এপ্লাই হলে এই হাজার হাজার একর ওয়াকফ সম্পত্তি রাতারাতি সরকার এবং ক্ষমতাশালি লোকদের দখলে চলে যাবে। বিজেপির আসল উদ্দেশ্য এটাই। 

Reject new waqf act 2025 - image -8

ওয়াকফ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে যেভাবে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে ভারতীয় গনতন্ত্রের জন্য তা লজ্জ্বা জনক।

বিজেপির একজন সংসদ বলছেন যে, হিন্দুদের মধ্যে অনেক সমাজ সংস্কার হয়েছে। হিন্দু দের মধ্যে সতী দাহ ছিল, সমাজ সংস্কার করে সতী দাহ বন্ধ করা হয়েছে। বিধবা বিবাহ হতো না সমাজ সংস্কার করে বিধবা বিবাহ চালু করা হয়েছে। মুসলমানদের মধ্য়ে কোন সমাজ সংস্কার আন্দোলন হয়নি, মুসলমান রা নিজেদের সমাজকে সংস্কার করেনা। এই নতুন ওয়াকফ আইন মুসলমান সমাজ কে সংস্কার করবে। মুসলমান সমাজের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষা করবে।

প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কোন জিনিসটা বা ঠিক কোন ধর্মীয় প্রথাটা আগে হিন্দু মুসলমান উভয়ের মধ্যে ছিল, হিন্দুরা সমাজ সংস্কার করে যেটা বাদ দিয়েছে, কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে এখনও আছে ?

মুসলমানদের মধ্যে কি সতি দাহ বা সহমরন প্রথা আছে বা আগেওকি কখনও ছিল?

মুসলমানদের প্রফেট হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে বিধবা মহিলা কে বিবাহ করেছিলে, তাই বিধবা বিবাহ প্রথা মুসলমান সমাজে প্রথম থেকেই আছে, সমাজ সংস্কার করে বিধাব বিবাহ চালু করার কোনো প্রয়জন পড়ে নি।

তাহলে মুসলমানদের ঠিক কোন প্রথাটা নিয়ে সংসদ মহাশয় এতো চিন্তিত? হিন্দুদের মধ্যে কুপ্রথাগুলে এখনো রয়েগেছে, বিজেপি কেন আইন করে সেগুলো বন্ধ করে না? 

Reject new waqf act 2025 - image -9

Reject new waqf act 2025 - image -10

Reject new waqf act 2025 - image -12

Reject new waqf act 2025 - image -13
Reject new waqf act 2025 - image -14

Reject new waqf act 2025 - image -15

Reject new waqf act 2025 - image -16
Reject new waqf act 2025 - image -17

Reject new waqf act 2025 - image -17

Reject new waqf act 2025 - image -19

Reject new waqf act 2025 - image -20

মুসলমানদের মধ্যে দেবদাসী প্রথা, ডাইনি প্রথা, শিশু বলি – নর বলি কি আছে, আগেকি কখনও ছিল?

ভারতের অনেক রাজ্য়ে আজও দেব দাসী প্রথা রয়েছে। ২০০৮ সালে কর্নাটকে ৪০, ৬০০ জন দেবদাসীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। ২০১৪ তে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে, তারপরও ২০২২ সালেও রাজ্যে রাজ্যে দেব দাসী প্রথা রয়ে গছে। আজকে ২০২৫ সালে ও আছে, বিজেপি এদের জন্য কেন সমাজ সংস্কারের কথা বলে না।

ডাইনি অপবাদ দিয়ে রাজ্যে রাজ্য়ে গরীব মহিলাদের হত্যা করা হচ্ছে।শিশু বলির মত জঘন্য প্রথা হিন্দুদের মধ্যে আজও রয়ে গেছে, এমনকি শিক্ষিত হিন্দুরাও এর থেকে পিছিয়ে নেই।  

তাহলে বিজেপি সংসদ গলার শিরা ফুলিয়ে কোন সমাজ সংস্কারের কথা বলছেন যেটা হিন্দুদের মধ্যে নেই কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে আছে?


নতুন ওয়াকফ আইনে মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা করার জন্য় তৈরী ওয়াকফ বোর্ডে হিন্দু সদস্য় রাখা বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে।

এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে ১১ জন সদস্যর মধ্যে মুসলিম সদস্য থাকবে মাত্রই ৩ জন বাকি ৮ জন সদস্য হবে হিন্দু। যেটা সংবিধান বিরোধী।

ভারতে হিন্দুদের মন্দির পরিচালনা করার জন্য অনেক ট্রাস্ট এবং আইন রয়েছে। যেমন –

  • Karnatak hindu relegious institution charitibal endowment  act 1997
  • Jagannath temple atc  1955
  • Mata baisnavbi devi shrine act 1988
  • Tamilnadu religious charitible act  1959
  • Uttar pradesh Kashi Biswanath temple act 1983
  • Shikh Gurduara act 1925 etc.

এর কোনটাতেই কোন মুসলমান তো দুরের কথা কোন নিম্নবর্নের হিন্দুকেও স্থান দেওয়া হয় না, আইনে সে কথা বলা হয়নি।


বিজেপির বক্তব্য হিন্দু রাজা মহারাজারা যদি মুসলমানদের ওয়াকফে দান করতে পারে তাহলে হিন্দুরা কেন ওয়াকফ বোর্ডে থাকতে পারবে না। 

মুসলমান সুলতান এবং বাদশাহরাও হিন্দুদের বহু মন্দিরে দান করে গিয়েছেন। এই বংলায় গৌড়ের সুলতান রা, মুর্শিদাবাদের নবাবরা বহু হিন্দু মন্দিরে দান করে গেছেন। এমন কি যে অঔরঙ্গজেবের নামে হিন্দুত্ববাদীদের এতো এলার্জি সেই অঔরঙ্গজেবও অনকে হিন্দু মন্দির দান করে গেছেন, যেমন –

  • উজ্জয়নির মহাকাল টেম্পল
  • বারানসিতে Jangam Bari Math
  • ১৬৮৭ সালে, সম্রাট বারাণসীর একটি ঘাটে অবস্থিত কিছু খালি জমি (যেটি একটি মসজিদের কাছাকাছি ছিল) রামজীবন গোসাঁইকে প্রদান করেন, যাতে সেখানে ‘ধার্মিক ব্রাহ্মণ ও সন্যাসিদের জন্য ঘর নির্মাণ করা যায়।
  • ১৬৯১ সালে আওরঙ্গজেব মহন্ত বালক দাস নির্বাণীকে চিত্রকূটের বালাজি মন্দির রক্ষার্থে আটটি গ্রাম ও একটি বড় ট্যাক্সমুক্ত জমি প্রদান করেন। 
  • ১৬৯৮ সালে তিনি মধ্য ভারতের পূর্ব খন্দেশ অঞ্চলে এক ব্রাহ্মণ রঙ্গ ভট্টকে করমুক্ত জমি দান করেন। 

শুধু হিন্দু নয় আওরঙ্গজেব জৈন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এরকম অনেক দান করেন 

  •  ১৬৫০-এর দশকের শেষ দিকে গুজরাটের শত্রুঞ্জয়, গিরনার ও মাউন্ট আবু—যেগুলো জৈন তীর্থস্থান—সেখানে নির্দিষ্ট জৈন সম্প্রদায়কে জমি দান করেন। তিনি লাল বিজয় নামে এক জৈন সন্ন্যাসীকে একটি মঠ (গোশালা) প্রদান করেন
  •  ১৬৭৯ সালে একটি বিশ্রামাগার (উপাশ্রয়) এর জন্য অনুদান দেন। 
  • এমনকি ১৭০৩ সালেও আওরঙ্গজেব আদেশ জারি করেন যাতে জৈন ধর্মীয় নেতা জিনচন্দ্র সূরিকে কেউ হয়রানি না করে।

এইসব কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে, সেই সময়ের স্থানীয় জৈন সাহিত্যগুলোতে আওরঙ্গজেবের প্রশংসাসূচক বর্ণনা পাওয়া যায়, যেমন: মারদানো অউর মহাবলী আওরঙ্গসাহি নারন্দা আর্থাৎ ‘আওরঙ্গজেব শাহ একজন সাহসী ও শক্তিশালী রাজা’

Reject new waqf act 2025 - image -21

Reject new waqf act 2025 - image -22

এই তালিকা অনেক দির্ঘ। ঔরঙ্গজেবের হাতে লেখা ফরমান এই সব মন্দিরে আজও সজত্ম সংরক্ষিত রয়েছে।

বিজেপিকে আমাদের প্রশ্ন – তাহলে-কি এইসব মন্দিরের ট্রাষ্টে, পরিচালন কমিটিতে কি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে?


বিজেপির বক্তব্য ওয়াকফ প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি নয়, ওয়াকফ প্রপার্টি সিভিল প্রপার্টি।

বিজেপির বক্তব্য – হিন্দু মন্দিরের প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি, খৃষ্টান চার্চের প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি – গ্রেবিয়ার্ডের প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি, শিখ গুরুদ্বারের প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি, বৌদ্ধ মঠের প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি, কিন্তু মুসলমানদের মসজিদের প্রপার্টি বা কবরস্থানের প্রপার্টি রিলিজিয়াস প্রপার্টি নয় ওটা সিভিল প্রপার্টি।

কতবড় ঘৃ্ণ্য নোংরা সাম্প্রিদায়িক দল হলে তবে সংসদে এই কথা বলা যায়। এই কথা থেকেই বুঝা যায় বিজেপির আসল উদ্দেশ্য কি, কেন তারা এই নতুন ওয়াকফ আইন নিয়ে এসেছে, কেনই বা ভারতের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগন এই নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করছে।

Leave a Reply